এনামুল হক টগর এর কবিতা গুচ্ছ

Dainik Pabna

এনামুল হক টগর এর কবিতা

রুদ্ধ দ্বার

হৃদয়ের গভীরে রহস্যের চোখগুলো খুলে দাও গোপন চেতনা।
সাধনায় তৃতীয় নয়ন জেগে উঠুক সূর্য দীপ্ত আলোর কিরণ।
বহুকাল ধরে নিজেকে চেনার জন্য মানব শরীরে গবেষণা ধ্যান।
তপস্যায় আত্মার রহস্য জানতে পারলে রুদ্ধ দ্বার ভেঙে সাধকের বন্দনা।
শরীর একখণ্ড কাঁচা মাটি চাষাবাদের শস্য ফলানো ভূমি।
তাঁর উপর বীজ বপন করো সবুজ মাঠে দৃশ্যমান সোনালী ফসলের ছবি।
ধ্যান স্রষ্টার সাথে যোগাযোগের মারফত সেতু বন্ধ দরজা খোলার চাবি!
তত্ত্বজ্ঞানের বিজ্ঞতায় আঁধার ভেঙে চিরন্তন আলোর ছড়াও জগত গৌরব।
প্রবাহমান স্রোতে চলতে চলতে দীর্ঘ নদী
সাগরে মিশে হয় একাকার-
এক সময় নিজের পরিচয় হারায় সমুদ্র নামে নতুন পরিচয় মহাসাগর!
নদীর স্রোত ও দেহের রক্তে এক মহাশক্তি লুকিয়ে থাকে বিশ্বত্মায় দীপ্তকর।
কঠিন সাধনায় তাঁকে জাগিয়ে তোল পুষ্প সৌরভ জ্ঞানের আলোতে সুদূর-
ধীরে ধীরে নিজেকে চিনতে পারলে ভবিষ্যৎ পথের ঠিকানা খুঁজে পাবে সরল।
কে তুমি মর্মরহস্য মানব কোথায় ছিলে তুমি কি তোমার পরিচয় আসল?
চিনতে পারলে সময় তোমার আহবানে সাড়া দেবে ইতিহাস বৃত্তে কমল।
আত্মার পাশে সৃষ্টি কর্তা দাড়িয়ে শাক্তি দেয় কল্যাণ সাহায্য নিশ্চয়।
জীবনে জাগতে চাইলে নিজেকে জাগাও বিপুল আলোয় অনাদি প্রেম অক্ষয়।
সৃষ্টিকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ভালোবাসার পথে হেঁটে যাও নিরন্তর-
স্রষ্টা মসজিদ মন্দির ও কিতাবের চেয়েও অনেক নিকটে আত্মায় দীপ্তকর।
স্রষ্টা তোমাকে সৃষ্টি করেছে অনন্ত অসীম জটিল প্রজ্ঞার ব্যথায় অঙ্গার!
তাঁকে তুমি নিজের বাহিরে খোঁজ কেন অশুভ অশনি অন্ধকার!
মায়ার ভ্রান্ত জাল ভেঙে সমাজ সচেতনতার আলো জ্বালাও আত্মায়!
অন্তরে তত্ত্বজ্ঞান জেগে উঠলে তুমিই মহান তুমিই বৃহৎ তুমিই দাস বিস্ময়।
কখনো তুমিই বীর তুমিই মহাবীর তুমিই রণাঙ্গনে সাহসী যোদ্ধা বিজয়।
তুমিই অনাগত তুমি মৃত্যুকেও ভয় পাও না তুমি আজানার পথে আলোকপ্রাপ্ত জ্ঞান।
সাধনায় নিজেকে চিনে গেছো এখন রুদ্ধ দ্বার ভেঙে ছুটে চলো বাঁধনমুক্ত নতুন।
বিপুল আলোর ঠিকানায় তুমি পৌঁছে যাও জীবন যৌবন সৌন্দর্যে নয়ন।

This may contain: an abstract painting with black and orange colors

 

বর্ষার বিরহ

এখন বর্ষাকাল কদম গাছে ফুল ফুটেছে রঙিন বাহারি আকাশ।
মেঘের আড়ালে সূর্য উঠছে রৌদ্রর সোনালি ঝলক কখনো বাতাস।
তুমি চলে এসো রূপের আগুনে আমি কবিতা লিখি প্রকৃতি অরণ্য।
আমি দিনের সূর্য দীপ্ত কিরণ তুমি রাতের চন্দ্র নক্ষত্র পাখির গান।
তোমার ভালোবাসার সমুদ্রে আমি দূরন্ত মাছ সাঁতার কাটি খেলা করি ঢেউয়ে উচ্ছ্বাস।
তুমি যৌবনের ভালোবাসা আমি হৃদয়ের প্রেম এক গোপন সংকেত বিশ্বাস।
এই প্রবল বৃষ্টির শ্রাবণে আমি প্রতিক্ষায় দাড়িয়ে আছি ভেজা শরীর।
তুমি অপলক চেয়ে চেয়ে বর্ষণে ভিজে ভিজ কদম ফুলের মালা হাতে এসো দীপ্তকর।
এই ভালোবাসার উদ্যানে এই ফসলের সুগন্ধি মাঠে তোমার ভালোবাসা লাবণী।
আমি প্রেমের আগুনে পুড়ে পুড়ে তোমাকে খুঁজে ফিরে শাওন বিরহ বর্ষার দিনে।

 

উপহার


তোমার জন্য যুদ্ধ করে মূল্যবান উপহার এনে দিতে চাই ভক্তি ও ভালোবাসা।
কঠিন দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ভাবি কাঁটার গভীরে লুকিয়ে আছে হৃদয়ের সত্য বিশ্বাস।
সমুদ্রের উথল পাতাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে মণিমুক্তা সংগ্রহের চেষ্টা করি অপরূপ দর্শন!
তপস্যায় অমৃত যৌবন হৃদয়ে সাঁতার কাটে তোমার প্রেমে মগ্ন বিভোর অন্তর নয়ন।
খাঁচার ভেতরের আয়নাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নে ধ্যানে তোমার বাগিচা পুষ্প ঝলমল।
ইচ্ছে করলেই হৃদয়ে দেখি তোমার নব নব রূপ তোমার তরুণ বয়স চঞ্চল!
শতকে শতকে সহস্র বছর ধরে তুমি নিরব নিরিবিলি কখনো নির্মল।
স্থিতির আসল ঠিকানায় তোমাকে দেখি লক্ষ কোটি বছরে ধরে বিপুল আলোয় সরল।
মানব চৈতন্য সত্তায় তুমি খেলা করো তোমার ভেতর কার আনন্দ উজ্জ্বল হাসি।
তোমার মনের ভেতর কার দুঃখ বেদনা বিচ্ছেদের অশ্রু ক্রন্দন যন্ত্রণার ভেতর আশা।
দেহের ভেতরে কাঁদে এক বেদনাবিধুর জ্বালা বিষাদ অগ্নি পিণ্ডে কঠিন যাতনা।
সেই যন্ত্রণা থেকে জীবনকে রূপান্তর করে তুমি পথ দেখাও চুপ থাকলে গল্প কবিতা শোনায়!
অর্ধেক পথ অন্ধকার বাকি পথ নদী সাগর কঠিন ঢেউ পাড়ি দিয়ে যাত্রা জয়পরাজয়।
আলো দাও চিরন্তন সত্য পথের বন্ধু অনন্তকালের বিশ্বাসী প্রিয়তম অক্ষয়।
অশুভ মর্মভেদ জটিল বিষ পান না করে আমি ছুটে যাই তোমার ঠিকানায়।
তোমার মূল্যবান উপহার পৌঁচ্ছে দিতে চাই হৃদয়ের গভীরে পরিশুদ্ধ প্রেমের চেতনায়।।

 

কাঁটার গভীরে দর্শন


অহংকার হাঁটতে হাঁটতে এক সময় যন্ত্রণার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় মনের হাহাকার।
আমিত্ব ক্রোধ জীবনকে মলিন করে তোলে ব্যথার গভীরে ছটফট করে চিৎকার।
প্রসব বেদনার ভেতর মাতৃত্বের গুণাগুণ সন্তান ভূমিষ্ট হয় স্রষ্টার দীপ্ত চেতনা।
কাঁটার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মালী উদ্যানে ফুল ফোঁটায় নতুন রঙের ভাবনা।
দুঃখ কষ্টের ক্ষত থেকে সভ্যতা আর মানবতার জন্ম হয় সেবার পথে কল্যাণ।
ব্যথাহীন জীবন মনকে অহংকারী করে তোলে ভবিষ্যৎ আন্ধকার অনাগত দিন বিষণ্ণ।
গভীর রাত প্রভাত ভেবে যে পাখি অশনি ডাকে অশুভ অসুর ক্রন্দন।
প্রেম ও জ্ঞানকে আঁকড়ে ধরো শক্তির রসদ পাবে ভালোবাসার রাস্তায় ঠিকানা।
একই ঘরের ভেতর যাবতীয় কর্ম রহস্যে পরীক্ষা নিরিক্ষা গবেষণা করি আমরা দু’জন।
মনে হয় কোটি কোটি মাইল দূরত্বে আমরা কঠিন তপস্যায় কাঁটার গভীরে তোমার দর্শন।।

This may contain: an abstract painting with blue, yellow and red colors

রেশমি রুমাল

ক্লান্ত রাত জাগা প্রেম আমার রেশমি রুমালের বেদনায় উদাস।
ভালোবাসার টান টান নিরবতার গভীরে মৃত পোকার অনুভূতি উপলব্ধি উল্লাস।
কতো যে রাত জেগে থাকি দুঃখ কষ্টে ঢাকা জীবন তবু তোমার প্রেম মধুময়।
তোমার ফুটন্ত চেহারার গভীরে নিরিবিলি হাসি সংসার আলিঙ্গন করে বিস্ময়।
রেশমি রুমাল তৈরি মৃত্যু আর মৃত্যুর ব্যথায় লক্ষ প্রাণের বিসর্জন বিনিময়!
প্রেম দেহের বাইরে ও ভেতরে পরিবর্তন আনে যন্ত্রণার গভীরে সংঘবদ্ধ জীবন।
গাছের ডালে পাখিদের কিচিরমিচির গান জমিনে শিশির ঝরে ফসলের যৌবন।
জনাকীর্ণ বাজারের দোকানে আমি মদ পান করি ভাঙা হৃদয়ে তোমার গৌরব।
সত্যের পথে হেঁটে যেতে অনেক ত্যাগের প্রয়োজন জ্ঞান সভ্যতাকে করে সজিব।
বহুদূর দিগন্তের নিচে সবুজ মাঠ একবিন্দু ভালোবাসা বুকে নিয়ে তোমার প্রতিক্ষায়।
অজস্র হলুদ গোলাপ ফুটে আছে বাগানে মহাবিশ্বের সমান প্রেম হৃদয়ে অক্ষয়।
অন্তহীন কষ্টের মাঝে তোমাকে না পাওয়ার ব্যথায় ভালোবাসার বিদীর্ণ যন্ত্রণা।
শরীর স্পন্দন করে বয়ে যায় ভোরের মৃদু বাতাস শব্দের সন্ধান করে কর্ণ।
গভীর রাত গাধার ডাক কুকুরের ঘেউঘেউ চিৎকার সকালে ফেরিওয়ালার হাঁকডাক।
এই নগরে আমি একা হেঁটে যাই প্রিয়তম জেগে ওঠো নতুন সংস্কার যুদ্ধ দিকেদিকে।

 

মৃত্যুর রহস্যে নতুন জন্ম  

তোমার করুণা ও দয়া থেকে মৃত্যুর রহস্যে মানবের জন্ম নতুন!
বাঁচার অধিকারে মানবই সংগ্রাম করে প্রতিবাদ সুষমবন্টন শ্লোগান।
লক্ষ কোটি বছর ধরে মানব আত্মা প্রবাহমান ও দীর্ঘ জীবন চলমান-
মানুষ প্রতিটি জন্মে কিছু না কিছু শিখে যায় দক্ষ জ্ঞানে নতুন নির্মাণ।
এক জনমে আমিও প্রেম ভালোবাসায় মগ্ন ছিলাম সভ্যতার কল্যাণ।
আরেক জন্মে আমিই হিংসা বিদ্বেষ ক্রোধ ও বিশ্বাসঘাতকতায় শত্রু ছিলাম ভয়ংকর।
কোন কোন জন্মে আমি অর্থ সম্পদ বৈভব ও প্রাচুর্যে রাজা ছিলাম কঠিন অহংকার। 
কখনো আমার আত্মা অর্জন করেছিল মহৎ প্রেম ও ফসলের ভিত্তি স্থাপন সুন্দর।
তোমার গুপ্তজ্ঞানে আমি উন্নত দরজায় গিয়ে পৌঁচ্ছে ছিলাম সমৃদ্ধির গবেষক।
প্রকৃতি মানব প্রেমে  আমি কবি ঔপন্যাসিক গল্পকার বিজ্ঞানী হয়েছিলাম বিজ্ঞ বিবেক।
সময়ের প্রয়োজনে আমি রাজনীতিবিদ শ্রমজীবী কর্মজীবী হয়েছিলাম মাঠের ডাক।
বহুবার আমি ডাক্তার প্রকৌশলী হয়েছিলাম নগরের পথে পথে সেবা দান পথিক।
আমার আত্মা আলোকপ্রাপ্ত পথে চলতে পচ্ছন্দ করে সৃষ্টিকর্তা নিরিবিলি অপেক্ষায়!
মানুষ মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র বিশ্ব তাঁর বাহিরের জগত ভেতরের জগতের প্রতিচ্ছবি।
নিজেকে ব্যর্থ পরাজিত ভাবলে জীবন দূর্বল হয়ে ওঠে করুণ অসহায় মানব স্বভাব।
নিজেকে শক্তিশালী ভাবলে জীবন বিপ্লবী হয়ে ওঠে যুদ্ধের রণাঙ্গনে বিজয় গৌরব।
তপস্যায় শরীর পরিপূর্ণ আত্মায় রূপান্তর হলে সুলতানুল মশায়েখ সত্তা অমর।
স্রষ্টা তোমাকে শান্তির পথে মুক্তি দেবে চিরন্তন সৌন্দর্যের উদ্যানে দীপ্তকর।
ভক্তি আদবে জন্মান্তরবাদ থেমে যাবে তুমি বাঁধনমুক্ত হবে স্বাধীন জীবন সুন্দর।

SHARES

ফেসবুকে অনুসরণ করুন

আরো পোস্টঃ