স্তন ও শিশ্নের শিল্প-সুষমা

Dainik Pabna

স্তন ও শিশ্নের শিল্প

স্তন ও শিশ্নের শিল্প-সুষমা

তারিফ হোসেন

স্তন ও শিশ্নের শিল্প-সুষমা তারিফ হোসেন ভূমিকা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ পরিমণ্ডলে স্তন ও শিশ্ন শব্দ দুটি কেবল শারীরিক অঙ্গ নয়, বরং এদের মধ্যে নিহিত রয়েছে গভীর প্রতীকতা, ধ্বনিময়তা, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রকৃতিসংশ্লিষ্ট রহস্য। শব্দ দুটি এমন ধাতু জোড়ের ওপর ভিত্তি করে গঠিত যা ধ্বনি, গর্জন, গতি, চন্দ্র এবং তরলতার সঙ্গে যুক্ত। এই প্রবন্ধে স্তন ও শিশ্নের মধ্যে প্রতীকমূলক সম্পর্ক যৌবন-আকর্ষণ-কামনা ও সৃষ্টির রহস্যময় ছন্দের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

১. স্তনের ধ্বনিমূলক অর্থ ও প্রতীকত্ব স্তন শব্দটি এসেছে স্তন্ বা তন্ ধাতু থেকে, যার অর্থ— ‘গর্জন করা’, ‘ধ্বনি ঘোষণা’, বা ‘উচ্চারণ করা’। এই ধাতুটি গ্রিক, স্লাভিক ও জার্মানিক ভাষায়ও বিদ্যমান, যেখানে তা প্রাকৃতিক শব্দ, মেঘের গর্জন বা উচ্চারিত শব্দকে নির্দেশ করে। স্তন যৌবনের আগমন বার্তা বহন করে। এটি কেবল দৈহিক পূর্ণতার চিহ্ন নয়, বরং ধ্বনির মতো তার উপস্থিতিকেও জানান দেয়। একে ধরা যেতে পারে এক প্রকার ‘শব্দের কলস’ হিসেবে—যা তরল ও সৃষ্টির সম্ভাবনায় পূর্ণ। স্তন এইভাবে হয়ে ওঠে মাতৃত্ব, উর্বরতা ও আকর্ষণের প্রতীক।

২. শিশ্ন ও চন্দ্র-প্রতীকের মধ্যে সম্পর্ক শিশ্ন শব্দটির উৎপত্তি শশ্ ধাতু থেকে, যার অর্থ— ‘লাফানো’ বা প্লুতগামিতা। এই ধাতু থেকেই এসেছে শশক (খরগোশ), যা আবার চন্দ্রের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত—যেমন শশিধর (যিনি শশকে ধারণ করেন)। এইভাবে চন্দ্র এবং শিশ্ন উভয়ই লাফ, চপলতা এবং তারল্যের ধারণা বহন করে। শিশ্ন কেবল উত্তেজনায় উত্থিত পুরুষ লিঙ্গ নয়—এটি একপ্রকার উর্ধ্বগামী শক্তি, যেটি রূপ-রস ও আকর্ষণের স্পর্শে জেগে ওঠে। এটি চন্দ্রোদয়ের মতো মোহাবিষ্ট এক গতিরূপ, যেখানে কামনা, প্রাণশক্তি ও প্রজননের রূপক উপস্থিত।

৩. স্তন ও শিশ্নের পারস্পরিক সম্পর্ক এই দুই অঙ্গের সম্পর্ক শুধুই যৌন বা শারীরিক নয়, বরং প্রকৃতির চুম্বকীয় টান ও প্রতিক্রিয়ার মতো। স্তন মেঘের মতো ঘনীভূত, বজ্রে ঠাসা কুম্ভ; শিশ্ন চন্দ্রের মতো—স্নিগ্ধ, ঊর্ধ্বগামী ও রসবাহী। স্তনের দৃশ্যমানতা একপ্রকার ধ্বনি বা আহ্বান, যা শিশ্নকে উত্তেজিত করে, তরলে পূর্ণ করে তোলে। এটি এক কসমিক নাট্য: স্তন আহ্বান জানায়, শিশ্ন সাড়া দেয়। মেঘ ও চন্দ্র, জল ও জোয়ার, শব্দ ও স্পন্দনের প্রতীকী সংলাপ এই যৌগিক রসায়নের ভিত্তি।

৪. পৌরাণিক অনুরণন ঋগ্বেদের শিশ্নদেবাঃ শব্দটি শিশ্নপূজার একটি উল্লেখ—এতে স্পষ্ট, এককালে শিশ্ন ছিল পবিত্র প্রাণশক্তির প্রতীক। শিবলিঙ্গ ও যোনিপীঠের মিলনে যেমন প্রকৃতি ও পুরুষের চিরন্তন সংযোগ প্রতিফলিত, তেমনি এই প্রতীকের গভীরতা আধ্যাত্মিক স্তরেও বিস্তৃত। তান্ত্রিক দেবীপূজায় স্তন শুধু পুষ্টির উৎস নয়—এটি চেতনার আধার, যা সাধকের ভেতর চক্রসাধনার মাধ্যমে জাগতিকতা অতিক্রম করে দিব্যতায় পৌঁছায়।

৫. আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ আধুনিক মনোবিজ্ঞান, নিউরো-বায়োলজি ও মানববিকাশবিদ্যা স্তন ও শিশ্নকে কেবল প্রজননের যন্ত্র হিসেবে না দেখে, স্নায়ুবিক আনন্দ, মানসিক নিরাপত্তা ও সংযোগবোধের এক উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শিশু মায়ের স্তনের সংস্পর্শে প্রথম যে স্নেহ-তৃপ্তি পায়, সেটিই জীবনের প্রথম অন্তরঙ্গ বন্ধন ও নিরাপত্তাবোধের ভিত্তি। শিশ্ন, অপরদিকে, যৌন উত্তেজনার মাধ্যমে শুধু প্রজননের নয়—মানব-মানবীর মেলবন্ধনে অক্সিটোসিন ও ডোপামিন নির্গমন ঘটায়, যা ভালোবাসা, আত্মসমর্পণ ও মস্তিষ্কের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। এতে যৌনতা রূপ নেয় আত্মিক যোগাযোগের সেতুতে।

৬. স্থাপত্যশিল্পে স্তন-শিশ্ন প্রতিফলন স্থাপত্যেও স্তন ও শিশ্ন প্রতীকের প্রভাব সুস্পষ্ট। বিভিন্ন সভ্যতায়, বিশেষ করে ইন্দো-ইউরোপীয় ও ভূমধ্যসাগরীয় শিল্পকলায়, গম্বুজ ও স্তম্ভের প্রতীকায়ন নারীত্ব ও পুরুষত্বের রূপক হিসেবেই ব্যবহৃত। গম্বুজ অনেকসময় স্তনের রূপক, যেমন সান্তা মারিয়া দেল ফিওরে’র বিশাল ডুওমো; আর স্থিতিশীল, ঋজু স্তম্ভ লিঙ্গপ্রতীকের রূপ ধারণ করে। শিবলিঙ্গ-যোনিপীঠের তান্ত্রিক উপস্থাপনায় যেমন আধ্যাত্মিক শক্তির উত্থান ও স্তন্যদায়িনী প্রকৃতির আশ্রয় একত্র হয়, তেমনি স্থাপত্যের মধ্যেও নারী-পুরুষের প্রতীকী সম্মিলন সৃষ্টিশীল শক্তির নিদর্শন বহন করে।

উপসংহার স্তন ও শিশ্ন শব্দদ্বয় কেবল অঙ্গ নয়—এরা ধ্বনি, গতি, আলো ও কামনার প্রতীক। স্তন গর্জনের মতো আহ্বান জানায়; শিশ্ন তার উত্তরে লাফিয়ে ওঠে। এই দুটির পারস্পরিক আকর্ষণ পৃথিবী ও আকাশ, নারী ও পুরুষ, ঘনত্ব ও প্লবতার চিরন্তন সংলাপ। এ প্রবন্ধ এক প্রকার ভাষাতাত্ত্বিক ও প্রতীকতাত্ত্বিক অন্বেষণ, যেখানে শব্দ হয়ে ওঠে শরীর, শরীর হয়ে ওঠে বিশ্বস্রষ্টার ধ্বনি।

উপসংহার স্তন ও শিশ্ন শব্দদ্বয় কেবল অঙ্গ নয়—এরা ধ্বনি, গতি, আলো ও কামনার প্রতীক। স্তন গর্জনের মতো আহ্বান জানায়; শিশ্ন তার উত্তরে লাফিয়ে ওঠে। এই দুটির পারস্পরিক আকর্ষণ পৃথিবী ও আকাশ, নারী ও পুরুষ, ঘনত্ব ও প্লবতার চিরন্তন সংলাপ। এ প্রবন্ধ এক প্রকার ভাষাতাত্ত্বিক ও প্রতীকতাত্ত্বিক অন্বেষণ, যেখানে শব্দ হয়ে ওঠে শরীর, শরীর হয়ে ওঠে বিশ্বস্রষ্টার ধ্বনি।

লেখক : তারিফ হোসেন, শব্দবিশারদ ও সুরকার

SHARES

ফেসবুকে অনুসরণ করুন

আরো পোস্টঃ